কিটো ডায়েট ক্ষতিকর, নাকি উপকারী? এ প্রশ্নের উত্তর আমরা জানি কি? শরীর ফিট রাখতে, শারীরিকভাবে নিজেকে আকর্ষনীয় করতে অথবা অতিরিক্ত ওজনজনিত অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে হালের ট্রেন্ডি উপায় হচ্ছে কিটো ডায়েট। শতবছরের পুরনো এই কিটো ডায়েট এর ধারনা ইদানীং নতুন করে সবার মাঝে আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। কিটো ডায়েট এর মাধ্যমে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া ঘরে বসেই ওজন কমানো সম্ভব, এমন ধারনা থাকায় বর্তমানে প্রচুর মানুষ কিটো ডায়েটের দিকে ঝুঁকছেন।
কিটো ডায়েট কি? কাদের করা বারন, এর উপকারিতা, এর ক্ষতিকর দিক, কিটোতে কি খাবেন, কি খাবেন না ইত্যাদি বিষয়ে না জানা, কম জানা বা ভুল ধারনা থাকায় অজান্তেই নিজ স্বাস্থ্যের বড়ো ধরনের ক্ষতি করছেন অনেকেই। সম্প্রতি পাশের দেশ ভারতে একজন চিত্রনায়িকার মৃত্যু হয়েছে কিটো ডায়েট সংক্রান্ত স্বাস্থ্যগত জটিলতায়। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক কিটো ডায়েট এর বিস্তারিত।
কিটো ডায়েট এর বিস্তারিত নিয়ে লিখেছেন ডাঃ মোহাম্মদ শাকিলুজ্জামান।
চার পর্বের ধারাবাহিক লিখার আজ থাকছে ২য় পর্ব।
কিটো ডায়েট এর বিস্তারিতঃ ২য় পর্ব
সুপ্রিয় পাঠক, শুরুতেই আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। কিটোডায়েটিং শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাকীয় জটিল প্রক্রিয়ায় বড়ো ধরনের পরিবর্তন ঘটানোর মাধ্যমে শরীরের ফ্যাট বা মেদকে বার্ণ করে থাকে। এর ফলশ্রুতিতে দেহের অতিরিক্ত মেদ ঝরে গিয়ে ওজন কমে থাকে। ১ম পর্বের লিখায় কিটো ডায়েট কি, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক পুষ্টি চাহিদা কতো, ব্যালেন্সড ডায়েট কি, এ ব্যাপারে ধারনা দেয়া হয়েছিলো।
চলুন এ পর্বে জেনে নেয়া যাক কিটো ডায়েট এর আর কিছু বিষয়।
প্রয়োজন অনুযায়ী সাধারনত কিটোডায়েট চার ভাবে প্ল্যান করা হয়ে থাকে, যেমনঃ
১। ষ্ট্যান্ডার্ড কিটো ডায়েটঃ
এ ধরনের ডায়েটে প্রায় ৭০ ভাগ ফ্যাট/স্নেহজাতীয় খাবার, ২০ ভাগ প্রোটিন/আমিষ জাতীয় খাবার এবং ১০ ভাগ কার্বহাইড্রেট/শর্করা থাকে।
২। সাইক্লিক কিটো ডায়েটঃ
নির্দিষ্ট সময় এর জন্য এ ধরনের ডায়েট প্ল্যান করা হয়। যেমন, সপ্তাহে ৫ দিন কেটোডায়েট (কম কার্বহাইড্রেট/শর্করা সম্পন্ন খাবার) এবং ২ দিন অতিরিক্ত কার্বহাইড্রেট/শর্করা সম্পন্ন খাবারের পরামর্ষ দেয়া হয়।
৩। টার্গেটেড কিটো ডায়েটঃ
এ ধরনের কিটো ডায়েটে যিনি কিটো ডায়েট করতে যাচ্ছেন, তার শারীরিক পরিশ্রমের ধরন ও পরিমাণ অনুযায়ী খাদ্যতালিকায় পরিমান মতো কার্বহাইড্রেট/শর্করা যোগ করা হয়।
৪। হাইপ্রোটিন কিটো ডায়েটঃ
এ ধরনের ডায়েটে প্রায় ৬০ শতাংশ ফ্যাট/স্নেহজাতীয় খাবার, ৩৫ শতাংশ প্রোটিন/আমিষ জাতীয় খাবার ও ৫ শতাংশ কার্বহাইড্রেট/শর্করা থাকে।
লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই, চার প্রকারের কিটো ডায়েটের প্রতিটিতেই কার্বোহাইড্রেট/শর্করা যোগ করে ডায়েট প্ল্যান করা হয়ে থাকে।
কার্বোহাইড্রেট/শর্করা সম্পূর্ণ ভাবে বাদ দিয়ে করা ডায়েট প্ল্যান কিটো ডায়েট নয়, তা হবে নো-কার্ব ডায়েট।
যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে খেয়াল রাখতে হবে যে, আমরা কথা বলছি কিটো ডায়েট নিয়ে, নো-কার্ব ডায়েট নিয়ে নয়।
তাই যারা কিটো ডায়েটজনিত ক্ষতির ঝুঁকিতে নেই, তারা নিয়ম মেনে সল্পমেয়াদে কিটো ডায়েট করলে শরীরে কার্বহাইড্রেট/শর্করার যে ঘাটতি হচ্ছে তার প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনা কম। যথেষ্ট সচেতনতার সাথে অভিজ্ঞ ডাক্তার এবং ডায়েটিশিয়ানের সরাসরি তত্তাবধানে শরীরের ক্ষতি এড়িয়ে কিটো ডায়েট সম্ভব। কিটো ডায়েট শরীরের জন্য উপকারী বা ক্ষতিকর এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত গবেষনালব্ধ প্রমান নেই। আপনার ওজন কমানোর জন্য উপরের কোন ধরনের কিটো ডায়েট, কতো সময়ের জন্য করবেন, তা অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার বা ডায়েটেশিয়ান এর সাথে পরামর্শ করে শুরু করা উচিৎ। নয়তো আপনি হঠাত অনাকাংখিত জটিল ধরনের শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। কারনঃ
আপনার জন্য কিটো ডায়েট ক্ষতিকরঃ
• যদি আপনার বয়স ১৮ বছরের নীচে হয়ে থাকে
• আপনি যদি ডায়াবেটিস এর রোগী এবং প্রায়ই হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন অথবা যদি আপনি ইনসুলিন ব্যাবহারকারী হয়ে থাকেন।
• যদি আপনার কিডনিজনিত সমস্যা থাকে, যেমন কিডনী ফেইলিউর বা কিডনীতে পাথর আছে ইত্যাদি
• যদি আপনি প্যানক্রিয়াটাইটিস এর রোগী হয়ে থাকেন
• যদি আপনার শরীরে মাংসপেশীজনিত সমস্যা থাকে
• যদি আপনি গর্ভবতী হয়ে থাকেন
• যদি আপনার অল্পদিন পূর্বে কোনো সার্জারী/অপারেশন হয়ে থাকে
• আপনি যদি এমন ওষুধ সেবনরত অবস্থায় থাকেন, যার কিডনি বা লিভারে ক্ষতিকর প্রভাব আছে
• যদি আপনার রক্তে ইলেকট্রোলাইট এর মাত্রা ঠিক না থাকে
• যদি আপনি স্ট্রোক এর রোগী হয়ে থাকেন
• আপনার হার্ট এটাকের ঝুঁকি থাকলে, ইত্যাদি
পড়ুনঃ ওজন কমাতে চাচ্ছেন? কিটো ডায়েট ১ম পর্ব
বর্তমান সময়ে কিটো ডায়েট কে সাধারন মানুষের কাছে যতো সহজভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, ব্যাপারটি আসলে ততোটা সহজ বা নিরাপদ নয়।
কোন কোন ক্ষেত্রে কিটো ডায়েট ক্ষতিকর, তা না জেনে এ ধরনের ডায়েট শুরু করলে বড় ধরনের স্বাস্থ্যজনিত জটিলতার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া ও কিটো শুরুর আগে অবশ্যই নীচের বিষয় গুলো আপনার জানা প্রয়োজন, যেমনঃ
কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি কিটো ডায়েট করবেন?
কেটো ডায়েট শুরুর আগে কি ধরনের প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন?
কেটোসিস কি?
কিটো ডায়েট এর ফলে আপনার শরীরের ওজন কমার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কিনা তা কিভাবে বুঝবেন?
আজ এ পর্যন্তই, আগামী পর্বের লিখায় থাকছে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর, সে পর্যন্ত সুস্থ্য ও নিরাপদ থাকুন। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ
ডাঃ মোহাম্মদ শাকিলুজ্জামান
লেখক পরিচিতি
তথ্যসূত্রঃ
The Lancet
Medscape
Webmed
Healthline
NCBI
Internet
Medical Books
From Authors Experience